বাসক পাতার অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ১৭টি কার্যকরী তথ্য জানুন
বাসক পাতার অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। বহুল প্রচলিত ঔষধি পাতা হিসেবে বাসক পাতার সুনাম রয়েছে। বাসক পাতার এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমরা সাধারণভাবে জানি না।
বাসক পাতার বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী বিষয়ের সাথে আজ আমরা বিশেষভাবে জানতে চলেছি, বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তবে আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ বাসক পাতার অজানা উপকারিতা
বাসক পাতার অজানা উপকারিতা
বাসক পাতার অজানা উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে বাসক পাতার ব্যবহার রয়েছে। কবিরাজি পাতা হিসেবে বাসক পাতার সুনাম থাকলেও এর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। এই আর্টিকেলে আমরা আজ ভিন্নধর্মী আলোচনা করতে চলেছি।
বাসক পাতার ১৭টি অজানা উপকারিতা
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন ও রক্তপাত কমাতে সহায়ক হয়। আপনার যদি মাড়ির ব্যথা ও ফোলা ভাব থাকে, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস দিয়ে কুলকুচি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- বাসক পাতা আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং হার্টের কার্যকারিতার উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- বাসক পাতায় থাকা অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ও অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান আমাদের ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া থেকে শরীরকে নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে।
- আপনার যদি আঙুলের ফাঁকে ফোড়া বা ফুসকুড়ি থাকে, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতা পেস্ট করে ক্ষতস্থানে লাগালে দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং সংক্রমণ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করে থাকে।
- আপনার যদি শরীরে বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতা পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে চুলকানি ও লালচে ভাব কমে যায়।
- বাসক পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি খেলে আপনার দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়, যার ফলে ঘামের দুর্গন্ধ কমে যায়।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি সিনোজেনিক উপাদান, যা আপনার ব্রেন টিউমারের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
- বাসক পাতায় থাকা সেডেটিভ বৈশিষ্ট্য আপনার অনিদ্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাসক পাতার চা খেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি এজিং উপাদান, যা আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
- বাসক পাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি চোখের আশেপাশে লাগালে চোখের সংক্রমণ দূর হয়ে যায়, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান, যা আপনার মাথার ত্বকের ফাঙ্গাস দূর করে খুশকি কমিয়ে দিতে পারে এবং চুলের গোঁড়া মজবুত করে চুল পড়া দূর করে দিতে পারে।
- বাসক পাতা শুকিয়ে গুড়া করে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুকনা বাসক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করলে মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূরে চলে যায়।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি টক্সিক বৈশিষ্ট্য, যা আপনার হজম তন্ত্রের বিষাক্ত উপাদান দূর করে খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- বাসক পাতায় রয়েছে সাইটোপ্রোটেকটিভ উপাদান, যা আপনার পাকস্থলীর আলসার দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
- বাসক পাতায় সামান্য অ্যান্টি ভেনম বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে সাপে কামড়ালে গ্রামাঞ্চলে এই পাতা পিষে ব্যবহার করে থাকে। বর্তমান সময়ে সাপে কামড়ালে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান বাসক পাতায় রয়েছে। বাসক পাতার রস কুসুম গরম করে কানে ব্যবহার করলে ইনফেকশন কমাতে সহায়ক হয়।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি প্রুরিটিক বৈশিষ্ট্য যা প্রচণ্ড গরমে বাসক পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করলে চুলকানি ও ঘামাচি দূর হয়ে যায়।
বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম ও তৈরি পদ্ধতি
বাসক পাতা রস খাওয়ার নিয়ম ও তৈরি পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হওয়া স্বত্বেও এই পাতার রস নিয়ম মেনে না ব্যবহার করলে শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। বাসক পাতা ব্যবহারের পূর্বে নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরী। বাসক পাতার বেশ কিছু নিয়ম নিম্নে উপস্থাপন করছি।
- বাসক পাতার রস, গোলমরিচ ও তুলসী পাতার রসের সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। দিনে ১বারের বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
- ২-৩ চামচ বাসক পাতার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার খেলে জ্বর ও সর্দি কাশিতে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়।
- যদি ব্রণ, চুলকানি বা অ্যাকজিমার মত সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২-৩ দিন ১ চা চামচ করে বাসক পাতার রস খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বাসক পাতার রস লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- প্রতিদিন ১ চা চামচ বাসক পাতার রস খেলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয় এবং জমে থাকা কফ সহজে বের হয়ে যায়। গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। মধু বা আদার রসের সাথে মিশিয়ে খেলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- সপ্তাহে ৩-৪ দিন ১ চা চামচ করে বাসক পাতার রস, গোল মরিচ ও লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেলে লিভার ও কিডনি পরিষ্কার করতে সহায়ক হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ বাসক পাতা রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ বাসক পাতার রস পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অ্যাসিডিটি কমে যায়। আরও ভালো উপকার পেতে আধা চা চামচ মৌরি ও মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- সপ্তাহে ২-৩ দিন সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ বাসক পাতার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়।
- মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ডের সমস্যায় সপ্তাহে ৩-৪ দিন ১ চা চামচ করে বাসক পাতার রস গুড় বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস না খাওয়া উচিত।
বাসক পাতার রস তৈরির পদ্ধতি
বাসক পাতার ৫-৭টি মাঝারি আকারের পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই পাতা ব্লেন্ডারে দিয়ে অথবা ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। ছাঁকনির সাহায্যে রস ছেকে নিতে হবে। সরাসরি খেতে অসুবিধা হলে গরম পানি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
বাসক পাতার ঔষধি গুণাগুণ
বাসক পাতার ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রচুর উপকারী উপাদান বাসক পাতায় রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। বাসক পাতার ঔষধি গুণাগুণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্য হল, আপনারা যেন জেনে শুনে এই পাতা স্বাভাবিক রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।
- বাসক পাতা ব্রংকাইটিস ও হাঁপানির ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে কারণ, এতে রয়েছে ব্রঙ্কোডাইলেটর উপাদান, যা শ্বাসনালীর সংকোচন কমিয়ে দিতে পারে।
- বাসক পাতায় থাকা ভাসিসিন ও ভাসিনোন নামক উপাদান আপনার বুকের মিউকাস তরল করে সহজে বের করে দিতে পারে।
- বাসক পাতায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আপনার লিভার পরিষ্কার করে রক্ত বিশুদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও এটি লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে ভালো কাজ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক
- বাসক পাতায় ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা আপনার অ্যাসিডিটি ও বদ হজম দূর করতে সহায়ক হয়। এই পাতায় আরও রয়েছে প্রাকৃতিক ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য, যা পাকস্থলী থেকে টক্সিন দূর করে দিতে পারে।
- বাসক পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ত্বকের জীবাণু দূর করতে সহায়ক হয়ে থাকে।
- অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান বাসক পাতায় রয়েছে, যা আপনার শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক জনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
- অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতে এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে বাসক পাতা ভালো উপকার দিয়ে থাকে।
বাসক পাতার সিরাপ
বাসক পাতার সিরাপ সম্পর্কে বলতে গেলে, সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বাসক পাতা সচরাচর পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে সরাসরি এই পাতা পাওয়া কষ্টকর, যার ফলে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ও ঔষধ কোম্পানি বাসক পাতার সিরাপ হিসেবে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। বাসক পাতার সিরাপ খেলেও ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়।
বাসক পাতার সিরাপ এই পাতার নির্যাস থেকে তৈরি করা হয়। এটি এমন এক ধরনের তরল ঔষধ, যা মূলত কাশি, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস ও ফুসফুস জনিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাজারে পাওয়া অনেক বাসক পাতার সিরাপের মধ্যে মধু, তুলসী পাতার রস, আদার রস, লবঙ্গ ও মৌরি যুক্ত করা থাকে, যা এই সিরাপ এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
বাসক পাতার সিরাপ খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হয়। এটি রক্তের জমাট বাধা প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। ধুলাবালি ও বিভিন্ন দূষণের কারণে হওয়া শ্বাসকষ্টের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। আপনার যদি ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতা আপনার জন্য ব্যাপক উপকারী হতে পারে। এটি আপনার গলায় জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ ও কফ দূর করতে সাহায্য করবে।
বাসক পাতার উপাদান
বাসক পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলতে গেলে, এই পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক শক্তিশালী অ্যালকালয়েড, যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হয়ে থাকে। বাসক পাতার অজানা উপকারিতার মধ্যে, বাসক পাতায় থাকা ফ্লাভোনয়েড ও ট্যানিন উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। বাসক পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই পাতা ব্যবহারে সতর্ক হওয়া যাবে এবং সহজে ব্যবহার করা যাবে।
১০০ গ্রাম বাসক পাতার উপাদান
নম্বর | উপাদান | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | শর্করা | ১৫-২০ গ্রাম |
২ | প্রোটিন | ৪-৬ গ্রাম |
৩ | ফ্যাট | ০.৫-১ গ্রাম |
৪ | ফাইবার | ৫-৮ গ্রাম |
৫ | ভিটামিন সি | ৫০-০০ মিলিগ্রাম |
৬ | ভিটামিন এ | ৪০০০-৬০০০ মাইক্রোগ্রাম |
৭ | ক্যালসিয়াম | ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম |
৮ | আয়রন | ৫-১০ মিলিগ্রাম |
৯ | পটাশিয়াম | ৩০০-৫০০ মিলিগ্রাম |
১০ | ফসফরাস | ৫০-১০০ মিলিগ্রাম |
১১ | ম্যাগনেসিয়াম | ৪০-৮০ মিলিগ্রাম |
১২ | অ্যান্টি অক্সিডেন্ট | ১-৩ গ্রাম |
বাসক গাছের ব্যবহার
বাসক গাছের ব্যবহার সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু তথ্য জানতে চলেছি। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বাসক পাতার ব্যবহারের সাথে সাথে এই গাছ আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারি। বিভিন্ন ধরনের উপকার এই গাছ আমাদেরকে দিয়ে থাকে। আপনার আশেপাশে বাসক গাছ থাকলে সেটা আপনার জন্য পরম উপকারী বন্ধু হতে পারে।
- বাসক পাতার তীব্র গন্ধ সাপ, ক্ষতিকর পোকামাকড়, মাছি, কীটপতঙ্গ, উইপোকা ইত্যাদি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। বাসক পাতা পোড়ানো ধোঁয়া মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাচীন পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।
- পরিবেশ বান্ধব কীটনাশক তৈরিতে বাসক গাছের ব্যবহার পরীক্ষাধীন রয়েছে। বাসকের নির্যাস থেকে প্রাকৃতিক কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
- পুকুরে মাছের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বাসক পাতার রস ব্যবহার করা হয়। বাসক পাতা পুকুরের পানিতে ফেলে রাখলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে বলে কথা প্রচলিত রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা ও অপকারিতা
- শুকনা বাসক পাতা ধান, চাল বা গমের মধ্যে রেখে দিলে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও সংক্রমণ থেকে শস্য ভালো থাকে। বেশ কিছু অঞ্চলে মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য বাসক পাতা ব্যবহার করা হয় কারণ, এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায় এবং পচন রোধ করতে পারে।
- বাসক পাতাকে বলা হয় নাইট্রোজেন ফিক্সিং উদ্ভিদ, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং এই গাছের মূল মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকায় বাসক গাছকে মাটি ক্ষয় রোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- বাসকের রস অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াতে পারে যা ক্রীড়াবিদদের সহনশীলতা বৃদ্ধিতে এবং পেশির ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক হয়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে বাসকের রস অ্যানার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে, যা অ্যাথলেটদের জন্য সহায়ক হয়ে থাকে।
লাল বাসক পাতার গুণাগুণ
লাল বাসক পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে বলতে গেলে, এই পাতা সাধারণত বাসকের তুলনায় বেশি কার্যকরী ও ভিন্নধর্মী গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে। এই পাতা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও চীনা চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পাতার ব্যবহার রয়েছে। লাল বাসকের পাতার শিকড় ও ফুল ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
লাল বাসক পাতা শক্তিশালী অ্যান্টি ভাইরাল ও ইমিউন বুস্টার হিসেবে পরিচিত। এটি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মত ভাইরাল রোগ প্রতিরোধে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। এই বাসকের পাতার নির্যাস ব্লাড থিনার হিসেবে কাজ করতে পারে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই পাতার রস নিউরোট্রান্সমিটার কার্যকলাপে প্রভাব রাখতে পারে, যার ফলে ডিপ্রেশন, অনিদ্রা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয়ে থাকে। এতে থাকা নিউরো প্রোটেকটিভ উপাদান আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে। লাল বাসকের রস পুরুষদের জন্য প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
কাশি হলে বাসক পাতা কিভাবে খেতে হয়
কাশি হলে বাসক পাতা কিভাবে খেতে হয় এ সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু তথ্য জানতে চলেছি। কাশি হলে সাধারণত আমাদের শ্বাসনালী শুষ্ক হয়ে যায়। বাসক পাতায় থাকা কিছু উপাদান এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উপকার দিয়ে থাকে। বাসক পাতার রস ঠাণ্ডা জ্বরেও বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
- গলা ব্যথা, শ্বাসনালী পরিষ্কার এবং এ জাতীয় সংক্রমণ কমাতে ৫-৬টি বাসক পাতা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে ১ চা চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। দিনে ২-৩ বার এই পানীয় পান করলে শুষ্ক কাশি ও গলা ব্যথার ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাসক পাতার সিরাপ তৈরি করা যায়। এই সিরাপ তৈরি করার ক্ষেত্রে ১০-১৫ টি বাসক পাতা ২ কাপ পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি অর্ধেক কমে গেলে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে। এর মধ্যে ২ চা চামচ আদার রস, ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন ২-৩ বার ১ চা চামচ করে পান করা কার্যকরী হতে পারে। এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করেও পান করা যায়।
- শুকনা কাশি ও গলা চুলকানিতে বাসক পাতার লাড্ডু তৈরি করে খাওয়া যায়। এই লাড্ডু তৈরি করতে বাসক পাতা শুকিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। এতে সামান্য আদা গুড়া, গোল মরিচ গুড়া ও খাঁটি মধু মিশিয়ে লাড্ডু তৈরি করতে হবে। দিনে ২ থেকে ৩ বার একটি লাড্ডু মুখে রেখে চুষে খেতে হবে।
- বাসক পাতার ধোঁয়া তৈরি করে প্রাকৃতিক ইন হেলার তৈরি করা যায়। এই ইন হেলার আপনার নাক বন্ধ হলে বেশ কার্যকরী উপকার দিয়ে থাকে। এটি তৈরি করতে ২-৩ টি বাসক পাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া নাক মুখ দিয়ে হালকা করে টেনে নিতে হবে। দিনে ১ থেকে২ বার এই ধোঁয়া নিলে নাক বন্ধ ভাব দূর হয়ে যাবে।
- বাসক পাতার রস সরাসরি খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। বাসক পাতার চা ও সিরাপ তৈরি করে খেলে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পাওয়া যায়। তুলসী পাতার রসের সাথে বাসক পাতার রস মিলিয়ে খেলে কাশির জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে থাকে।
বাসক পাতার অপকারিতা
বাসক পাতার অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। বাসক পাতায় প্রচুর প্রয়োজনীয় উপাদান থাকা সত্ত্বেও এর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে আমাদের শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। বাসক পাতার অতিরিক্ত ব্যবহার ও যথেচ্ছা ব্যবহারে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
- বাসক পাতার রস আমাদের রক্তনালী প্রশস্ত করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত সেবন করলে ব্লাড প্রেশার বিপজ্জনক ভাবে কমে যেতে পারে, যার ফলে তীব্র মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
- বাসক পাতার রস জরায়ু সংকোচন করে অকাল গর্ভপাতের ঘটনা ঘটাতে পারে। বাসক পাতার রস প্রাকৃতিক ভাবে মাসিক তরান্বিত করে। গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
- বাসক পাতার অতিরিক্ত ব্যবহার স্নায়ুর উপর প্রেশার পড়তে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মনোযোগের ঘাটতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত বাসক পাতা সেবন করলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বাসক পাতার রস ফুসফুস পরিষ্কার করলেও এটি অতিরিক্ত ব্যবহার করলে বিপরীতমুখী ফল হতে পারে। সবসময়ের জন্য বাসক পাতা পরিমাণ মতো সেবন করা উচিত।
- বাসক পাতার রস প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে পারে, যার ফলে ঘনঘন প্রস্রাব এর সমস্যা এবং পানি শূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাসক পাতার রস খেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
- বাসক পাতার নির্যাস স্নায়ুকে শিথিল করে দিতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ক্লান্তি ও ঘুম ভাব সৃষ্টি হতে পারে। ড্রাইভিং বা ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনা করার সময় বাসক পাতার রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
- বাসক পাতায় থাকা উপাদান লিভারের অ্যানজাইম লেভেলে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ দিন ব্যবহারে লিভারের প্রদাহ ও ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- দীর্ঘ মেয়াদে বাসক পাতা ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে, যার ফলে অল্পতেই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
- বাসক পাতার রসে কিছু ব্যক্তির শরীরে অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ফুসকুড়ি বা ত্বকের লালচে ভাব তৈরি হতে পারে।
- বাসক পাতার রস অতিরিক্ত ব্যবহার করলে হার্ট রেট ধীর হতে পারে, যা হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব খেলতে পারে। যাদের হার্টে ব্লক রয়েছে, তারা বাসক পাতা ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন।
- বাসক পাতার রস কিছু নারীর শরীরে মাসিক চক্রের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হতে পারে। কিছু নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকিও থেকে যায়।
- বাসক পাতায় রয়েছে অক্সালেট উপাদান, যা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তারা বাসক পাতা সতর্কতার সাথে ব্যবহার করবেন।
- বাসক পাতার রস শিশুদের জন্য বিপদ জনক হতে পারে। ১২ বছর বয়সের নিচে কোন শিশুর বাসক পাতার নির্যাস দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বাসক পাতার রস অতিরিক্ত ব্যবহার করলে পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুণগত মান কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করলে পুরুষদের উর্বরতা কমে যেতে পারে।
- নিয়মিত বাসক পাতা সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম বা গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে। বাসক পাতা নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে।
- যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে বাসক পাতার ব্যবহার বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। বাসক পাতা স্বাভাবিকভাবে আপনার রক্ত পাতলা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ মেয়াদে বাসক পাতার ব্যবহারে কিছু ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। নিয়ম মেনে ও বিরতি দিয়ে বাসক পাতা ব্যবহার করলে সম্ভাব্য ঝুঁকি কমানো যায়।
লেখকের শেষ কথাঃ বাসক পাতার অজানা উপকারিতা
বাসক পাতার অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা বেশ কিছু তথ্য পেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, অতিরিক্ত বাসক পাতার ব্যবহার আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সব সময়ের জন্য বাসক পাতা নির্দিষ্ট পরিমাণ মেপে ব্যবহার করা উচিত।
আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ পোস্ট করা হয়। এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি আপনি বাসক কথা সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত এই ওয়েবসাইট ভিজিট করলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য পাবেন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আজ এখানেই শেষ করছি।
আর্টমহলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url