গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানুন

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হিসেবে স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। 

গর্ভাবস্থায়-ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স-খাওয়ার-নিয়ম

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার বিভিন্ন বিষয়ের সাথে আজ আমরা আরও আলোচনা করব, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ কি এ সম্পর্কে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেই। 

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম 

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম 

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলতে গেলে, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ মা ও গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক গঠন, স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি এবং দেহের সঠিক বিকাশে সহায়ক হয়ে থাকে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই মেডিসিন গ্রহণে আরও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে, চলুন জেনে নেই। 

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সঠিক মাত্রা এবং নিয়মে খাওয়ার একটি মেডিসিন। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধাপে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের প্রয়োজন বিভিন্ন হতে পারে। চিকিৎসক যে নিয়ম বলবে তা যথাযথ পালন করা উচিত। কোনভাবেই বেশি ফলের আশায় অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করা যাবে না। 

সঠিক সময়ে সঠিক ডোজ নেওয়াঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের সঠিক ব্যবহার এবং যে কোনও সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করার অন্যতম পদ্ধতি হল, সঠিক সময়ে সঠিক ডোজ নেওয়া। 

খাওয়ার পর গ্রহণ করাঃ খালি পেটে এই মেডিসিন আপনার শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। বেশ শক্তিশালী ভিটামিন কম্পোজিশন হওয়ায়, সব সময় খাওয়ার পর এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। 

ফলিক অ্যাসিড কে প্রাধান্য দেওয়াঃ গর্ভকালীন প্রথম ৩ মাসে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করবে। 

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করাঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করার পর আপনার যদি বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 

প্রাকৃতিক উৎস থেকে গ্রহণ করাঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর সাথে যে সমস্ত খাবারে এই উপাদান গুলো রয়েছে যেমনঃ ডিম, দুধ, বাদাম, শাক-সবজি, কলা এবং মাছ এই সমস্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া।

অতিরিক্ত গ্রহণ না করাঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার পর আপনার মনে হতে পারে হয়তো ভালোভাবে কাজ করছে না, একটার জায়গায় দুইটা খেয়ে নেই। এ জাতীয় চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সঠিক মাত্রায় খেলে সঠিক সময়ে সঠিক ফলাফল পাবেন। 

এছাড়াও ভিটামিন বি ১২, রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে ভূমিকা রাখে। এটি সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা জরুরী। সব সময় ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হবে, সুষম খাবার খেতে হবে এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে যথা সম্ভব ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনারা যদি গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন গ্রহণ করেন, আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন। 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ কি

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ কি সম্পর্কে বলতে গেলে, গর্ভাবস্থায় এই ভিটামিন কম্পোজিশন মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে, যা গর্ভকালীন সময়ে খুবই জরুরী। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তার আলাদা আলাদা এবং নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। 

  • ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) আপনার শক্তি উৎপাদন ও নার্ভ সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। 
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) শিশুর হাড়, পেশী এবং চোখের বিকাশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। 
  • ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড) হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে, ফ্যাট এবং প্রোটিন ভাঙ্গার মাধ্যমে শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। 
  • ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে শিশুর নার্ভ সিস্টেমের বিকাশ নিশ্চিত করে ও মায়ের প্রেগনেন্সি সংক্রান্ত বমি ভাব কমাতে সহায়ক হয়।
  • ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন) শিশুর ত্বক-চুল, নখের গঠন সঠিক রাখে, প্রোটিন, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • ভিটামিন বি৯ (ফলিক অ্যাসিড) প্রথম তিন মাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ও জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। 
  • ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শিশুর নার্ভ ও মস্তিষ্কের বিকাশের সহায়ক হয়। 

সরকারি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম 

সরকারি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলতে গেলে, বাংলাদেশ সরকারের এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ, যার কারণে সুস্থ শিশু জন্মগ্রহণ ও শিশুর জন্ম গ্রহণের সময় মায়ের মৃত্যুজনিত সমস্যা দূর হয়েছে। সরকার এই ট্যাবলেট বিনামূল্যে সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাপক কার্যকরী হয়। 

  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণের আগে সরকারি ডাক্তার বা স্বাস্থ্য-কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে। 
  • ভরা পেটে এই মেডিসিন গ্রহণ করতে হবে। 
  • ফলিক অ্যাসিডের সাথে এই মেডিসিন গ্রহণ করতে হবে।
  •  নিয়মিত ডোজ মেনে ঔষধ খেতে হবে, ডোজ মিস করলে ভিটামিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়।  
  • প্রতিদিন একটি ট্যাবলেট গ্রহণ করা সাধারণ নিয়ম, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 
  • অতিরিক্ত ডোজ কখনোই গ্রহণ করবেন না।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা

  • নিয়মিত ফলো আপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে আপনার শারীরিক কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না বুঝতে হবে। 
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণের সময় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। 
  • আপনার যদি বাড়তি ডোজের প্রয়োজন হয় চিকিৎসক আপনাকে বলে দিবে, নিজে থেকে ডোজ বাড়াবেন না। 
  • কিডনি সমস্যা বা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এই ট্যাবলেট গ্রহণের আগে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেলে কি মোটা হয় 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেলে কি মোটা হয় এ সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু তথ্য জানতে চলেছি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং খাবার থেকে শক্তি উৎপাদন এবং পুষ্টি শোষণ নিশ্চিত করে। আপনার শারীরিক কার্যক্রম ভালো থাকলে শরীরে শক্তি অনুভব করবেন এবং সব সময় ভালো অনুভূতির সৃষ্টি হবে। 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট সরাসরি মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে না। যখন আপনার শরীরে খাবার ভালোভাবে হজম হবে এবং পুষ্টি ভালোভাবে শোষিত হবে তখন কিছুটা ওজন বেড়ে যেতে পারে। এই মেডিসিন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে চিকিৎসক এই মেডিসিন গ্রহণ করতে বলে থাকে। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় চালতার অসাধারণ উপকারিতা

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার পর আপনার শরীর থেকে ভিটামিনের অভাব দূর হয়ে যায়, যার ফলে কিছুটা মোটা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা আছে। এই মেডিসিন গ্রহণ করলে ক্ষুধা অনুভূতি বৃদ্ধি পায় এবং ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করতে হয়, যার কারণে স্বাভাবিকভাবে একটু মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মোটা হয়ে যাওয়াটা সরাসরি ঔষধের প্রভাব নয়, এটা আমাদের বুঝতে হবে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগ 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে বলতে গেলে, এই ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীরে  বিভিন্ন উপসর্গ ও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ব্যাপক কার্যকর হয়ে থাকে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে যে সমস্ত উপাদান থাকে তার সুষম বন্টন খুবই জরুরী এবং মাত্রা বেশি হয়ে গেলে বেশ সমস্যা দেখা দেয়।

ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স-এর-অভাবজনিত-রোগ

  • ভিটামিন বি১ এর অভাবে বেরি বেরি রোগ দেখা দেয়, এই রোগের কারণে স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদপিণ্ডের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) এর অভাবে মুখে ফাটল, জিহ্বা লাল হয়ে যাওয়া, চোখ জ্বালাপোড়া, চর্ম ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। 
  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) এর অভাবে ডায়রিয়া ডার্মাটাইটিস এবং ডিমেনশিয়া জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। 
  • ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোফেনিক অ্যাসিড) এর অভাবে কিছু বিরল ও স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, সেই সাথে ক্লান্তি, পেশির জ্বালাপোড়া ইত্যাদি হতে পারে। 
  • ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা যেমনঃ খিচুনি, রক্তস্বল্পতা ও ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহ দেখা দেয়। 
  • ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন) এর অভাবে চুল পড়া, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, পেশির ব্যথা এবং স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়।
  • ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) এর অভাবে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভজাত শিশুর বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়।
  • ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) এর অভাবে পের্নিকিয়াস অ্যানিমিয়া, স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষতি যেমনঃ স্মৃতিভ্র‍ংশ  এবং খিচুনি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। 

 ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট এর নাম ও দাম 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট এর নাম ও দাম বিষয়ে এখন আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। বাংলাদেশী বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট এর উৎপাদন করে থাকে। কোম্পানি ভেদে ঔষধের মান ও দাম নির্ভর করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। ১০টি কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরছি। 

কোম্পানি মেডিসিনের নাম মূল্য
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস Neuro B ২৪০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)
অ্যারিস্টো ফার্মা Aristovit-B ২০০ থেকে ২৫০ টাকা
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল Vitabion ২০০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)
রেনাটা লিমিটেড Bicozin ২০০ থেকে ৩০০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)
এসিআই লিমিটেড MB 12 প্রতি ট্যাবলেট ৪ টাকা
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল Nuucos-B ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)
এস কে এফ ফার্মাসিটিক্যালস Neubion ২০০ থেকে ৩০০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)
জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস Neuvital ২৫০ টাকা
হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যাল Mecol 0.5 mg প্রতি ট্যাবলেট ৪ টাকা
অপসোনিন ফার্মা Becosulet ২২০ থেকে ৩০০ টাকা (৩০ টি ট্যাবলেট)

আরও পড়ুনঃ গর্ভকালীন সময়ে লেবু খাওয়া যাবে কি

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর উৎস 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর উৎস হিসেবে আমাদের প্রাকৃতিক ও খাদ্য ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি থেকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ব্যবহার করলে আমাদের শারীরিক কার্যক্ষমতা ব্যতিক্রমী ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয় না। প্রত্যেক মেডিসিনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে, যা আমাদের শরীরে বিশেষ ক্ষতির সৃষ্টি করে। 

শস্য ও শস্য জাতীয় পণ্যঃ গম, ব্রাউন রাইস এবং ওটস থেকে আমরা প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পেতে পারি। যে সমস্ত শস্যে বিশেষ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয় না, এই সমস্ত শস্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে। 

সবজি ও ফলঃ পালং শাক, ব্রকলি, মটরশুটি সহ সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। কলা, অ্যাভোকাডো এবং লেবু জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান থাকে। 

আরও পড়ুনঃ আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বোঝার উপায়

প্রোটিনের উৎসঃ গরুর মাংস, মুরগি এবং লিভার থেকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান পাওয়া যায়। ডিম, দুধ এবং পনিরে প্রচুর ভিটামিন থাকে। স্যালমন, টুনা, সার্ডিন এ জাতীয় মাছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান পাওয়া যায়। 

ডাল ও বাদামঃ মসুর ডাল, মুগ ডাল, কাঠবাদাম, আখরোট ইত্যাদি শস্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান পাওয়া যায়। 

ফার্মেন্টেড ফুডঃ ইয়োগার্ট এবং অন্যান্য দই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। 

সয়াবিন ও সয়া পণ্যঃ সয়া দুধ, সয়াবিন ও এ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান পাওয়া যায়। 

সামুদ্রিক খাবারঃ ঝিনুক এবং অন্যান্য শেল-ফিস সহ সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান পাওয়া যায়। 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যে সমস্ত খাবারে পাওয়া যায় এই খাবার খেয়ে যদি আমরা অভাব পূরণ করতে পারি, সে ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট এর প্রয়োজন হয় না। সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। সুষম খাদ্য গ্রহণ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব পূরণ করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। 

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার সতর্কতা 

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট গ্রহণ করলে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। সতর্কতা অবলম্বন করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করলে গর্ভবতী নারী ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। 

গর্ভাবস্থায়-ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স-ট্যাবলেট-খাওয়ার-সতর্কতা

পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করাঃ ভিটামিন বি এর অতিরিক্ত মাত্রা (ভিটামিন বি৬ এবং বি১২) গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

পুষ্টির উৎসের প্রাধান্য দেওয়াঃ ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস থেকে ভিটামিন বি গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে, যেমনঃ দুধ, ডিম, শাক-সবজি, মাছ, শস্য ইত্যাদির মাধ্যমে ভিটামিন বি গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

অ্যালার্জি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিঃ কিছু ট্যাবলেটে থাকা উপাদান আপনার শরীরের সাথে মানানসই নাও হতে পারে, এটি অ্যালার্জি, বমি বা পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

সঠিক সময়ে ডোজ গ্রহণ করাঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ফোলেট বা বি৯ এর প্রয়োজন বেশি হয়, এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সহায়ক হয়ে থাকে। পরবর্তী ধাপে অন্যান্য বি ভিটামিনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে, মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাবনাঃ যদি আপনি অন্য ঔষধ সেবন করেন, তবে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সেবনে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিছু ঔষধ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কার্যকারিতা হ্র‍াস করতে পারে। 

বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যায় ঝুঁকিঃ যে সমস্ত গর্ভবতী মায়েদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত ভিটামিন বি সেবন বিপজ্জনক হতে পারে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গেলে, সাধারণত শরীরে ভিটামিন বি এর অভাবে এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হয়। এই সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে নিরাপদ হলেও কিছু মানুষের শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই ভিটামিন কম্পোনেন্ট গ্রহণ করার পর কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, সে বিষয়ে চলুন জেনে নেই। 

পাচনতন্ত্রের সমস্যাঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করার পর বমি ভাব বা বমি হতে পারে। পেট ফাঁপা বা গ্যাস তৈরি হতে পারে। ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবারে অরুচি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 

ত্বকের সমস্যাঃ ত্বকে বিভিন্ন চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। লালচে দাগ বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে। ত্বকে অতি সংবেদনশীল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

অ্যালার্জির সমস্যাঃ মুখ, ঠোট বা গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা, তীব্র অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

স্নায়ুর সমস্যাঃ মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘুম বা অলস ভাব, হাত-পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে। 

পেশি বা জয়েন্টের সমস্যাঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করলে পেশিতে টান বা ব্যথা ও জয়েন্ট এর বিভিন্ন জড়তা দেখা দিতে পারে। 

অতিরিক্ত ডোজ সমস্যাঃ অতিরিক্ত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করলে লিভার বা কিডনিতে চাপ পড়তে পারে, এ ছাড়াও প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়ে যেতে পারে। 

মানসিক সমস্যাঃ উত্তেজনা বা উদ্বেগ, মনোযোগের অভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

হার্ট বিট এর সমস্যাঃ অনিয়মিত বা দ্রুত হার্ট বিট, রক্তচাপের সাময়িক বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে। 

লেখকের শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম  

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম এবং ভিটামিন বি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পেলাম। 

আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ পোস্ট করা হয়। এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি আপনি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য পাবেন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আজ এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্টমহলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url