পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা, ১৫ টি জানুন

পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। শীতকালীন শাক হিসেবে পালং শাক খুবই জনপ্রিয় হিসেবে প্রচলিত।

পালং-শাক-খাওয়ার-স্বাস্থ্য-উপকারিতা

পালং শাক খাওয়ার উপকারী ও অপকারী বিভিন্ন বিষয়ের সাথে আজ আমরা আরও বিস্তারিত জানব, পালং শাক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তবে আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা 

পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা 

পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, এই শাক কে আমরা সাধারণত স্পিনাচ বলে থাকি। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী শাক হিসেবে আমাদের খাদ্য তালিকায় এই শাক ভালো স্থান দখল করে আছে। পালং শাকের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক হয়ে থাকে। 

পালং শাক খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা 

  • পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের দৃষ্টি উন্নত এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক সহায়ক হয়ে থাকে। 
  • ভিটামিন কে সমৃদ্ধ উপাদান পালং শাকে রয়েছে, যা আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।  
  • পালং শাকে প্রচুর আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • পালং শাকে থাকে ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। 
  • পালং শাকে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। 
  • পালং শাকে কম ক্যালরি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
  • পটাশিয়াম উপাদান পালং শাকে রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হয়।
  • পালং শাকে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
  • পালং শাকে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। 
  • ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ উপাদান পালং শাকে রয়েছে, যা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। 
  •  পালং শাকে রয়েছে ফোলেট, যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে উন্নত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। 
  • পালং শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা আমাদের দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। 
  • পালং শাকে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরে ইনফ্লেমেশন কমাতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। 
  • পালং শাকে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা হজম শক্তি উন্নত করে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম 

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে চলেছি। পালং শাক খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক হয়। পালং শাক খাওয়ার সময় বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে দেহে সর্বাধিক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। পালং শাকের বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে নিয়ম মেনে খাওয়া খুবই জরুরী। 

নিয়ম মেনে পালং শাক খাওয়ার বিষয়ে বলতে গেলে, প্রথমে আসে মেপে খাওয়ার বিষয়। পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১ থেকে ২ কাপ পালং শাক খাওয়া যেতে পারে। আপনার যদি কিডনিতে পাথর বা আয়রন সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পালং শাক খাবেন। 

পালং শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে রান্না করা একটি জরুরী বিষয়। পালং শাক কাঁচা খেলেও কোন সমস্যা হয় না তবে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। পালং শাকের ভালো পুষ্টি উপাদান পেতে হালকা সিদ্ধ বা ভাপে রান্না করে খাওয়া ভালো পদ্ধতি। পালং শাক অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো পুষ্টি উপকারিতা পাওয়া যায়। 

পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে 

পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে এ সম্পর্কে বলতে গেলে, বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল পালং শাকে রয়েছে, যা আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। পালং শাক শীতকালে জন্মে এবং এই সময়ে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করতে এর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চলুন, আরও কিছু বিষয় জেনে নেই। 

ভিটামিন এঃ পালং শাক ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ আমাদের চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রাত কানা রোগ থেকে মুক্তি দেয়। ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

ভিটামিন সিঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক ক্রিয়া করে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সহায়ক হয়। ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যার কারণে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। 

আরও পড়ুনঃ হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম

ভিটামিন কেঃ পালং শাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন কে পাওয়া যায়। ভিটামিন কে আমাদের রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন কে হাড়ের ক্যালসিয়াম সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। 

পালং শাকে কি অ্যালার্জি আছে 

পালং শাকে কি অ্যালার্জি আছে এ সম্পর্কে চলুন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই। পালং শাক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। পালং শাকে থাকা বেশ কিছু উপাদান অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। শাক জাতীয় খাবারে যাদের সংবেদনশীলতা রয়েছে, তারা সতর্কভাবে পালং শাক খাবেন। 

  • পালং শাকে অক্সালেট পাওয়া যায়, যা মানুষের শরীরে অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। 
  • পালং শাকে স্পিন্চ প্রোটিন থাকে, যা শরীরে ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে খাওয়ার পরপরই শরীরে চুলকানি, ত্বকে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া এবং ঠোট ও গলায় ফোলা ভাব তৈরি হতে পারে। 
  • পালং শাকে পলিফেনন উপাদান থাকে, যা কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। পালং শাক খাওয়ার পর আপনার শরীরে যদি চুলকানি, ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। 

আরও পড়ুনঃ বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা 

  • পালং শাক খেলে শরীরে হিস্টামিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। যাদের শরীরে হিস্টামিন সমস্যা করে, তারা বুঝে শুনে পালং শাক খাবেন। আপনি যদি কম পরিমাণে পালং শাক খান, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম হবে। 

পালং শাকের পুষ্টি উপাদান 

পালং শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলতে গেলে, আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় প্রচুর পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারে পালং শাক। আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে শীতকালে আমরা পালং শাক খেতে পারি। পালং শাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ও মিনারের পাওয়া যায়। পালং শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে, চলুন আরও বিস্তারিত জেনে নেই।  

পালং-শাকের-পুষ্টি-উপাদান

১০০ গ্রাম পালং শাকের পুষ্টি উপাদান 

নম্বর উপাদান পরিমাণ
অ্যানার্জি ২৩ ক্যালোরি
প্রোটিন ২.৯ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৩.৬ গ্রাম
ফ্যাট ০.৪ গ্রাম
ভিটামিন এ ৯৩৭৬ আই ইউ
ভিটামিন সি ২৮.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ৪৮২. ৯ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন ই ২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৯ ১৯৮ মাইক্রোগ্রাম
১০ ক্যালসিয়াম ৯৯ মিলিগ্রাম
১১ আয়রন ২.৭ মিলিগ্রাম
১২ ম্যাগনেসিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম
১৩ ফসফরাস ৪৯ মিলিগ্রাম
১৪ পটাশিয়াম ৫৫৮ মিলিগ্রাম
১৫ সোডিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম
১৬ জিংক ০.৫৩ মিলিগ্রাম

পালং শাকের জুসের উপকারিতা 

পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, পালং শাকের পুষ্টি উপাদান পেতে আমরা বিভিন্নভাবে এই শাক খেতে পারি। সাধারণত রান্না বা ভাজি করে খাওয়ার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। আপনি যদি পালং শাক জুস করে খেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে ব্যাপক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে। চলুন, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেই। 

পালং শাকের জুস তৈরির নিয়ম 

  • ১কাপ তাজা পালং শাক (পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া)
  • ১টি মাঝারি আকারের শসা।
  • ১টি আপেল। 
  • ১ টুকরা আদা।
  • হাফ চামচ লেবুর রস। 
  • ১ কাপ ঠাণ্ডা পানি।
  • স্বাদ অনুযায়ী মধু।  

আরও পড়ুনঃ জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

পালং শাক, শসা ও আপেল ভালো করে ধুয়ে ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। উপকরণগুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে আদার টুকরা ও পানি মিশিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নেওয়ার পর এতে আধা চামচ লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে দিতে হবে। আপনি চাইলে এই অবস্থায় পরিবেশন করতে পারেন, কিন্তু যদি আরও মিহি তরল চান, সে ক্ষেত্রে এটা ছেঁকে নিতে হবে। গ্লাসে ঢেলে ঠাণ্ডা অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে। 

  • এই জুস খেলে আপনার রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক হবে। 
  • দৃষ্টিশক্তি উন্নত হবে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। 
  • হাড়ের গঠন ভালো হবে এবং হাড় শক্তিশালী হবে। 
  • আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 
  • হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভালো ফলাফল দিবে। 
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যাপক সহায়ক হবে। 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
  • আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করবে।

টক পালং শাকের উপকারিতা 

টক পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু ব্যতিক্রমী তথ্য জানব। টক পালং শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Rumex vesicarius, এটি ব্যাপক পুষ্টিকর এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন শাক হিসেবে পরিচিত। এই শাকের টক স্বাদের কারণে ভিন্নধর্মী পুষ্টি উপাদান এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। 

টক পালং শাকে প্রাকৃতিক অ্যাসিড এবং ফাইবার থাকে, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক হয়। এই শাক খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। টক পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। আমাদের হাড় মজবুত করতে এই শাকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই শাক খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে যায়। 

আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

টক পালং শাকে সামান্য ক্যালরি ও উচ্চ ফাইবার যুক্ত উপাদান থাকে, যা পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থেকে মুক্তি দেয়। এই সাথে থাকা আয়রন উপাদান রক্তশূন্যতা দূর করে। লিভারকে পরিষ্কার রাখতে এবং লিভারের চর্বি জনিত সমস্যা দূর করতে এই শাকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করতে এই শাক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

পালং শাক কাদের খাওয়া উচিত নয় 

পালং শাক কাদের খাওয়া উচিত নয় এই সম্পর্কে বলতে গেলে, পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই শাক আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রচুর প্রয়োজনীয় উপাদান থাকা সত্ত্বেও যে সমস্ত ব্যক্তির শরীরে নির্দিষ্ট সমস্যা রয়েছে, তাদের এই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চলুন, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জেনে নেই।  

পালং-শাক-কাদের-খাওয়া-উচিত-নয়

কিডনিতে পাথর সমস্যাঃ যে সমস্ত ব্যক্তিরা কিডনিতে পাথর সমস্যায় ভুগছেন, তারা পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। পালং শাকে থাকে অক্সালেট, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। অক্সালেট উপাদান শরীরের ক্যালসিয়ামের সাথে মিশে কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর তৈরি করতে পারে, যা কিডনি সমস্যা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখতে পারে। 

অতিরিক্ত আয়রন সমস্যাঃ আয়রনের অভাবে পালং শাক খাওয়া হয়ে থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তারা পালং শাক বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ করলে যকৃতের সমস্যা, হৃদপিণ্ডের সমস্যা এবং ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। 

রক্ত পাতলা কারী ঔষধ সেবনঃ যারা রক্ত পাতলা কারী ঔষধ সেবন করে থাকেন, তারা পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন কে, যার রক্ত জমাট বাধতে সহায়ক হয়। ভিটামিন কে আপনার রক্ত পাতলা কারী ঔষধ এর কার্যক্রম কমিয়ে দিতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্য সমস্যায় ভূমিকা রাখবে। 

পালং শাকের অপকারিতা 

পালং শাকের অপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রচুর পুষ্টি উপাদানে ভরপুর পালং শাক হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর বেশ অপকারিতা দেখা যায়। আপনারা পালং শাক খাওয়ার আগে স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জেনে বুঝে খাবেন। পালং শাক সবার শরীরে সমস্যার সৃষ্টি করবে না। পালং শাক খেয়ে যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন, সে ক্ষেত্রে খাওয়া বাদ দিতে হবে। 

  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। 
  • পালং শাক বেশি খেলে দাঁতের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে এবং দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 
  • শিশুদের শরীরে পালং শাক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, এজন্য শিশুদেরকে কম পরিমাণে দিতে হবে। 
  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে ফাইবারের কারণে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 
  • পালং শাকে থাকা ফাইটিক অ্যাসিড শরীরে আয়রন এবং জিংক এর শোষণে বাধা দেয়, যা রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে। 
  • পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন কে থাকে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আপনারা যদি রক্ত পাতলা করার ঔষধ সেবন করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে পালং শাক খাবেন না। 
  • কিছু মানুষের শরীরে পালং শাক অতিরিক্ত খেলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 
  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 
  • পালংশাকে পিউরিন নামক উপাদান থাকে, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় এবং গাউটের সমস্যা বৃদ্ধি করে। 
  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে শরীরে মিনারেলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। 

লেখকের শেষ কথাঃ পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা 

পালং শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম এবং পালং শাকের ভালো ও মন্দ অনেক বিষয়ে তথ্য পেলাম।

আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ পোস্ট করা হয়। এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি আপনি আশানুরূপ তথ্য পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য পাবেন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আজ এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্টমহলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url