কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা ও অপকারিতা, ১৮ টি তালিকা দেখুন

কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। খুবই সহজলভ্য ও কম দামি শাক হওয়া সত্ত্বেও এর প্রচুর শারীরিক উপকারিতা রয়েছে। 

কলমি-শাকের-অসাধারণ-উপকারিতা

কলমি শাকের বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী বিষয়ের সাথে আজ আমরা বিশেষভাবে জানতে চলেছি, গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তবে আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা 

কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা 

কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, কলমি শাক কে ইংরেজিতে ওয়াটার স্পিনাচ (water spinach) বলা হয়। কলমি শাক বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি শাক হিসেবে পরিচিত। প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ এই শাকে রয়েছে আমাদের শারীরিক পুষ্টির অভাব পূরণের অভাবনীয় উপাদান। নিয়মিত কলমি শাক খেলে শারীরিক প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়। 

কলমি শাকের ১৮ টি উপকারিতা  

  • রক্তশূন্যতা দূর করে আয়রনের ঘাটতি পূরণে কলমি শাক ব্যাপক ভূমিকা রাখে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এই শাকের ভূমিকা রয়েছে। 
  • কলমি শাকে উচ্চমানের ফাইবার রয়েছে, যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহায়ক হয়। 
  • কলমি শাকে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। 
  • কলমি শাকে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়ে থাকে। 
  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে কলমি শাক, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। 
  • কলমি শাকে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উপাদান হাড়ের গঠন শক্তিশালী করতে পারে। 
  • কলমি শাকের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণ কমায়। 
  • কলমি শাকের পটাশিয়াম উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • কলমি শাক খেলে হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী হয় এবং শরীরের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। 
  • কলমি শাকে কম মাত্রার ক্যালোরি এবং উচ্চমানের ফাইবার থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে। 
  • নিয়মিত কলমি শাকের রস খেলে শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। 
  • ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক উপাদান কলমি শাকে রয়েছে, যা আমাদের ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়ক। 
  • কলমি শাক আমাদের নিউরোলজিক্যাল ফাংশন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। 
  • লিভার পরিষ্কার রাখতে এবং ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করতে কলমি শাকের কার্যকারিতা রয়েছে। 
  • কলমি শাকে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সার থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে। 
  • কলমি শাকে থাকা আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মাসিকের সময় দুর্বলতা কমিয়ে দেয়। 
  • কলমি শাক পেটের আলসার প্রতিরোধ করে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • কলমি শাকের পাতা পেস্ট করে ত্বকে লাগালে বিভিন্ন ক্ষত ও প্রদাহ দূর হয়ে যায়। 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হয়। কলমি শাকে রয়েছে দেহের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করার উপাদান, যা গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর ক্ষেত্রে উপকারী হয়। কলমি শাকে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী উপাদান রয়েছে। 

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কলমি শাকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কলমি শাকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা গর্ভাবস্থায় খুবই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়। গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খেলে পাচন প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে অনেকের হজমের সমস্যা দেখা দেয়। কলমি শাকে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা হজম শক্তি উন্নত করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে ভূমিকা রাখে। 

গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য কলমি শাক খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই শাকে রয়েছে ফোলেট, যা গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডের গঠনকে সঠিকভাবে তৈরি করতে সাহায্য করে। কলমি শাকে থাকা ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও চোখের গঠনে ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর শারীরিক সুস্থতার জন্য কলমি শাক হতে পারে একটি ভালো খাবার। 

কলমি শাকে কি অ্যালার্জি আছে 

কলমি শাকে কি অ্যালার্জি আছে এ সম্পর্কে এখন আমরা কিছু বিষয় জানতে চলেছি। পুষ্টিগুণে ভরপুর কলমি শাক হওয়া সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত কলমি শাক খেলে অ্যালার্জির সম্ভাবনা তেমন থাকে না। আমাদের শারীরিক কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে কলমি শাক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। 

সালিসাইলেটঃ কিছু মানুষের শরীরে এই উপাদানটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কলমি শাকে এই উপাদান প্রচুর রয়েছে। কলমি শাক খেয়ে এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে এটি আপনার জন্য অ্যালার্জি সৃষ্টির কারণ। 

ল্যাটেক্সঃ কলমি শাকে থাকা এই উপাদানটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। আপনার যদি ল্যাটেক্সে অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে বুঝে কলমি শাক খেতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা

অ্যান্টি অক্সিডেন্টঃ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও অক্সালেট নামক উপাদান কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কলমি শাক খেয়ে আপনার শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা হলে ত্বকের চুলকানি বা ফুসকুড়ি, চোখ লাল ভাব বা পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট বা হাঁচি, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

কলমি শাকের রস খেলে কি হয় 

কলমি শাকের রস খেলে কি হয় এ সম্পর্কে বলতে গেলে, এই শাক আমাদের স্বাস্থ্যকর উপাদান সরবরাহ করে থাকে। কলমি শাকে থাকা উপাদান আমাদের শরীরের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতার মধ্যে, শরীর শক্তিশালী রাখতে নিয়মিত কলমি শাকের রস খাওয়া যেতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রোগমুক্ত দেহ রাখতে কলমি শাকের ভূমিকা রয়েছে। 

রক্ত পরিষ্কার করাঃ কলমি শাকের রস খেলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায়। এই শাকে থাকা উপাদান রক্তের দূষিত পদার্থ পরিশোধন করে ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

লিভার সুস্থ রাখাঃ লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে কলমি শাকের রস আপনারা খেতে পারেন। এটি লিভারের চর্বি কমাতে এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর হয়ে থাকে। আপনি যদি লিভারের সমস্যায় ভোগেন, সে ক্ষেত্রে কলমি শাকের রস হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান।  

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাঃ কলমি শাকের রসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার উপাদান রয়েছে। কলমি শাকে থাকা অন্যান্য উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

আরও পড়ুনঃ ধনে পাতার আশ্চর্য উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করাঃ কলমি শাকে থাকা ভিটামিন এ এবং সি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। কলমি শাকের রস খেলে ত্বকের বিভিন্ন দাগ ও ছোপ দূর হয়ে যায়, যার ফলে ত্বক সতেজ থাকে। 

হজম শক্তি উন্নত করাঃ কলমি শাকের রস হজম শক্তি বাড়াতে পারে। কলমি শাকে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে। আপনার হজমের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত কলমি শাকের রস খেতে পারেন। 

কলমি শাকের পুষ্টি উপাদান 

কলমি শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলতে গেলে, অতি উচ্চমানের খাদ্য পুষ্টি সমৃদ্ধ উপাদান কলমি শাকে রয়েছে। কলমি শাককে অনেকে জল শাকও বলে থাকেন। কলমি শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক হয়। আমাদের  দেহকে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ রাখতে কলমি শাক হতে পারে একটি ভালো উপাদান। 

কলমি-শাকের-পুষ্টি-উপাদান

১০০ গ্রাম কলমি শাকের পুষ্টি উপাদান 

নম্বর উপাদান পরিমাণ
অ্যানার্জি ১৮ ক্যালোরি
প্রোটিন ২.৬ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৩.১ গ্রাম
ফ্যাট ০.২ গ্রাম
ভিটামিন এ ৬৩০০ আই ইউ
ভিটামিন সি ৫৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ২৬০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন ই ১.৮ মিলিগ্রাম
ফোলেট ৫৮ মাইক্রোগ্রাম
১০ ক্যালসিয়াম ৭৭ মিলিগ্রাম
১১ আয়রন ১.৭ মিলিগ্রাম
১২ ম্যাগনেসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম
১৩ ফসফরাস ৩৪ মিলিগ্রাম
১৪ পটাশিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম
১৫ সোডিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম
১৬ জিংক ০.২০ মিলিগ্রাম

কলমি শাক খেলে প্রেশার বাড়ে না কমে 

কলমি শাকে প্রেশার বাড়ে না কমে সম্পর্কে বলতে গেলে, বাংলার রান্নাঘরে একটি পরিচিত সবুজ শাক হল কলমি শাক। এই শাকের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে অনেকের কাছে এটি খুবই প্রিয়। অনেকে জানতে চান কলমি শাকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয় কিনা। এ সম্পর্কে চলুন বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করি। 

কলমি শাকের পুষ্টি উপাদানের মধ্যে সোডিয়াম রয়েছে। যা আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিয়ে শরীরকে নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করতে পারে। কলমি শাকে পটাশিয়াম উপাদান রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়। 

আরও পড়ুনঃ মুলার উপকারিতা ও অপকারিতা

কলমি শাকে থাকা উপাদান উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিম্ন রক্তচাপকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে। একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, শুধুমাত্র কলমি শাক খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার মাধ্যমে আমরা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। 

কলমি শাক খেলে কি ওজন বাড়ে 

কলমি শাক খেলে কি ওজন বাড়ে এ সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রচুর পুষ্টি গুণে ভরপুর এই শাক খুবই সহজলভ্য এবং কম মূল্যে পাওয়া যায়। অনেকে এই শাককে সুস্বাদু খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন, আবার অনেকে অপছন্দ করেন। তবে যাই হোক, অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে কলমি শাক খেলে ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখে কিনা। চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই। 

কলমি শাকে খুবই কম মাত্রার ক্যালোরি থাকে, সেই সাথে ফাইবার, ভিটামিন এ ও সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং প্রচুর পানি থাকে, যা নিয়মিত খেলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হবে না। 

আরও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

এখন আমরা বলতে পারি, কলমি শাক সরাসরি ওজন বাড়ায় না বরং এটি ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। আপনি যদি এই শাক অতিরিক্ত তেলে ভেজে বা অন্যান্য তেল বা ঘি দিয়ে রান্না করে খান, সে ক্ষেত্রে তেল আপনার ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কম তেলে সিদ্ধ করে কলমি শাক খেলে ভালো উপকার পাবেন। 

প্রতিদিন শাক খেলে কি হয় 

প্রতিদিন শাক খেলে কি হয় এ সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রচুর পুষ্টি উপাদান শাকে থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আপনি যদি শাক-সবজি না খেয়ে ভাজা বা অন্যান্য ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। নিয়মিত শাক-সবজি খেলে আপনার শরীরের কার্যক্রম উন্নত হবে এবং আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। 

প্রতিদিন-শাক-খেলে-কি-হয়

আপনার শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে শাক। হৃদরোগের সমস্যা আমাদের সমাজে হর হামেশা দেখা যায়। নিয়মিত শাক খেলে এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এই শাক। 

শাক-সবজিতে কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবার থাকার কারণে আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে দিবে। আমাদের শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত পেট থেকে হয়ে থাকে। ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভূতি থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন এবং আপনার পেটের হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকবে। এর সাথে শরীর ভালো রাখা, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে শাক-সবজি ভালো ভূমিকা রাখে। 

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক 

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বলতে গেলে, আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপাদান কলমি শাকে রয়েছে। এই শাক আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খান এবং রান্নায় যদি কোন সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আরও কিছু বিষয়, চলুন আমরা জেনে নেই। 

  • যে কোনও শাক-সবজিতে কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, কলমি শাক খেলেও এ জাতীয় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
  • অতিরিক্ত কলমি শাক খাওয়া এবং অপরিষ্কার ভাবে খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • কলমি শাক খেলে কিডনি রোগীদের জন্য কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 
  • কলমি শাকে অক্সালেট উপাদান রয়েছে, যা অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। 
  • বর্ষাকালে কলমি শাকের পাতায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের সংক্রমণ হতে পারে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খেলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • দূষিত পরিবেশে কলমি শাক চাষ করা হলে এর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ, ভারী ধাতু বা কীটনাশক মিশে যেতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 
  • গর্ভাবস্থায় কম পরিমাণে কলমি শাক খাওয়া উচিত, বেশি খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
  • শিশুদের ক্ষেত্রে কলমি শাক খুবই কম পরিমাণে খাওয়ানো উচিত। 
  • কোন রোগের ঔষধ সেবন কালে কলমি শাক খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 
  • কলমি শাক পরিমিত পরিমাণে না খেলে এবং অতিরিক্ত তেল-মসলা দিয়ে রান্না করে খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কলমি শাক খাওয়ার উপকারী ও অপকারী বিভিন্ন বিষয় আমরা আলোচনা করলাম শুধুমাত্র স্বাভাবিক ভাবে খাওয়ার জন্য। কোন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আর্টিকেল লেখা হয়নি। যে কোনও সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আবেদন রাখছি। 

লেখকের শেষ কথাঃ কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা  

কলমি শাকের অসাধারণ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম এবং এটা বুঝতে পারলাম যে, কলমি শাক আমাদের শরীরের জন্য উপকারী একটি শাক। যথেচ্ছা ব্যবহারে কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ পোস্ট করা হয়। এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি বিষয় সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জেনেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য পাবেন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আজ এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্টমহলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url