কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে ২০টি তালিকা দেখুন

কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। সাধারণত রান্নায় কারি পাতার ব্যবহার আমরা দেখতে পেলেও এর আরও ব্যবহার ও উপকারিতা রয়েছে।

কারি-পাতার-চমৎকার-উপকারিতা

কারি পাতার উপকারী ও অপকারী বিভিন্ন বিষয়ের সাথে আজ আমরা আরও আলোচনা করব, চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। তবে আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা 

কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা 

কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানব। দক্ষিণ এশিয়ায় রান্নায় ব্যবহৃত হওয়া একটি পাতার নাম কারি পাতা। সাধারণত রান্নার স্বাদ-গন্ধ বৃদ্ধির সাথে এই পাতার বেশ কিছু উপকারী বিষয় চিন্তা করে ব্যবহার করা হয়। কারি পাতা ব্যবহারে শারীরিক অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। 

  • কারি পাতা খেলে হজমে সহায়ক হয় এবং পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • কারি পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।   
  • কারি পাতা শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে থাকে।
  • কারি পাতা চুল পড়া কমায়, চুলের খুশকি দূর করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 
  • ত্বকের বিভিন্ন ইনফেকশন এবং ব্রণ দূর করতে কারি পাতার ব্যবহার রয়েছে, তার সাথে এই পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে।  
  • কারি পাতায় আয়রন সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  • কারি পাতা শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল থেকে রক্ষা করে।
  • কারি পাতা বিভিন্ন সময় বমি ভাব কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 
  • কারি পাতা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদানে ভরপুর, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। 
  • কারি পাতা খেলে লিভার সুস্থ থাকে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়।
  • হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কারি পাতার ভূমিকা রয়েছে, তার সাথে কারি পাতা হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যাপক কাজ করে থাকে।
  • কারি পাতায় অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
  • ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল সংক্রমণ কমাতে কারি পাতার কার্যকারিতা রয়েছে। 
  • কারি পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘকালীন ভূমিকা পালন করে। 
  • কারি পাতায় অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ রয়েছে, যা বাতের ব্যথা কমাতে সহায়ক হয়।
  • কারি পাতায় ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং চোখের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে। 
  • কারি পাতা মুখের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে এবং আলসার সমস্যায় খুবই উপকারী হয়ে থাকে। 
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কারি পাতার ব্যবহার ভালো ফলাফল দেয় এবং নাক বন্ধ ভাব দূর করে।
  • কারি পাতার ব্যবহার ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। 
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে কারি পাতার ভূমিকা অস্বীকার করার মত নয়। 

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার 

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। কারি পাতার চমৎকার উপকারিতার মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। কারি পাতায় থাকা উপাদান চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়ক হয়ে থাকে। মাথার খুশকি দূর করে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করে।

চুল পড়া বন্ধে কারি পাতা তেলঃ চুল পড়া বন্ধে কারি পাতা তেল তৈরি করতে হলে, এক মুঠ কারি পাতা নারকেল তেলে ভালো করে আগুনে জ্বাল দিতে হবে। সেই তেল ঠাণ্ডা করে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করলে চুল পড়া কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।   

খুশকি দূর করতে কারি পাতার পেস্টঃ কারি পাতা বেটে বা ব্লেন্ড করে এই পেস্ট মাথার ত্বকে ৩০ মিনিট মাখিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে মাথার খুশকি দূর হবে এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে। 

কারি পাতা ও মেথি বীজের প্যাকঃ কারি পাতা ও মেথি বীজ একসাথে পেস্ট করে লাগালে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং চুল মজবুত হয়। 

কারি পাতা ও দইঃ কারি পাতার পেস্টে টক দই মিশিয়ে চুলে লাগালে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয় এবং চুল নরম ও মসৃণ থাকে।  

কারি পাতা ও হেনা প্যাকঃ কারি পাতা ও হেনা পাউডার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। 

এছাড়াও কারি পাতা ফুটিয়ে সেই পানিতে চুল ধুলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়। অলিভ অয়েল এর সাথে কারি পাতা মিশিয়ে চুলে ম্যাসেজ করলে চুলের শুষ্কতা কমে আসে। কারি পাতা তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে অকালপক্বতা এবং চুলের স্বাভাবিক কালো রং বজায় থাকে। কারি পাতা ও নিম পাতা পেস্ট করে স্কাল্পে লাগালে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হয়। 

কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম 

কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমরা বেশ কিছু তথ্য জানতে চলেছি। কারি পাতা রান্নায় ব্যবহারের সাথে অন্যান্যভাবে খেলেও এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারি। এই পাতায় প্রচুর ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন নিয়মে কারি পাতা খেলে বিভিন্ন রকম উপকারিতা পাওয়া যায়। 

সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়াঃ সকালে খালি পেটে ৪-৫টি তাজা কারি পাতা চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত হবে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরে চলে যাবে। কারি পাতায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে এবং শরীরের মেটাবোলিজম উন্নত করে। 

রান্নায় ব্যবহারঃ কারি পাতা বিভিন্ন রান্নার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি ডাল, তরকারি, সুপ, ভাজি বা অন্যান্য রেসিপির সাথে ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে এটি আপনার খাবারের স্বাদ বাড়াবে এবং খাবারের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করবে।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরা, মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

কারি পাতা চাঃ কারি পাতা দিয়ে স্বাস্থ্যকর চা তৈরি করা যায়। কয়েকটি কারি পাতা ১ কাপ পানিতে ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি ছেঁকে মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। শরীরকে ডিটক্স করতে এই চা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

কারি পাতার এই সমস্ত ব্যবহার আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই পাতার ব্যবহার বিশেষ উপকারিতা প্রদান করে থাকে। আপনার রান্নার স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি করতে এই পাতার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। সর্বোপরি আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে এই পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। 

কারি পাতার পুষ্টি উপাদান 

কারি পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলতে গেলে, অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হিসেবে কারি পাতার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব পূরণ করতে কারি পাতার ব্যবহার খুব ভালো ফলাফল দিবে। ১০০ গ্রাম কারি পাতায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা নিম্নে উপস্থাপন করছি। 

নম্বর উপাদান পরিমাণ
অ্যানার্জি ১০৮ ক্যালরি
প্রোটিন ৬.১ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১ ৮.৭ গ্রাম
ফ্যাট ১.০ গ্রাম
ভিটামিন এ ৭০৫৪ আই ইউ
ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ২.৫ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৮৩০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম
১০ ফসফরাস ৫ ৭ মিলিগ্রাম
১১ পটাশিয়াম ৮১০ মিলিগ্রাম
১২ সোডিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম
১৩ আয়রন ০.৯৩ মিলিগ্রাম
১৪ জিংক ০.২০ মিলিগ্রাম
১৫ থিয়ামিন (ভিটামিন বি১) ০.০৮ মিলিগ্রাম
১৬ রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২) ০.১৪ মিলিগ্রাম
১৭ নায়াসিন (ভিটামিন বি৩) ২.৩০ মিলিগ্রাম

আরও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক 

কারি পাতা বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায় 

কারি পাতা বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে বলতে গেলে, সাধারণ ঝোপঝাড় বা বাংলাদেশের যে কোন স্থানে আপনি কারি পাতা পেয়ে যাবেন। কারি পাতা মূলত উষ্ণ আবহাওয়ায় ভালোভাবে জন্মায় এবং বেড়ে ওঠে। গ্রামীণ অঞ্চল বা শহুরে পরিবেশে কারি পাতা পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে প্রচুর মানুষ চাষ করে থাকে। 

কারি-পাতা-বাংলাদেশে-কোথায়-পাওয়া-যায়

ঢাকার শহরতলীতে অনেক বাড়ির আঙিনায় কারি পাতা চাষ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং গাজীপুরে সাধারণত বন জঙ্গলে কারি পাতা জন্মায়। চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকাগুলোতে কারি পাতার চাষ হয়। রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, কক্সবাজার এবং খাগড়াছড়ি অঞ্চলে কারি পাতা পাওয়া যায়। সিলেটের মাটির গুনাগুণ এবং জলবায়ু কারি পাতা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। 

খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট এলাকায় কারি পাতার চাষ করা হয়। বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ভোলার গ্রামীণ অঞ্চলে কারিপাতা স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায়। রাজশাহীর উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় কারি পাতা খুব ভালোভাবে জন্মে, এছাড়াও নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং বগুড়াতে কারি পাতা পাওয়া যায়। রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওয়ে কারি পাতা খুব সহজে পাওয়া যায়। 

কারি পাতার বাংলা নাম কি 

কারি পাতার বাংলা নাম কি এই সম্পর্কে বলতে গেলে, বাংলাদেশ ও ভারতে কারি পাতা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এই সমস্ত অঞ্চলে কারি পাতার ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এই পাতাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশের সাধারণত ১টি-২টি নামে এই পাতাকে ডাকা হলেও ভারতে বিভিন্ন নামে এই পাতার প্রচলিত নাম রয়েছে।

  • বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পাতাকে গন্ধরাজ পাতা এবং কারি পাতা বলে।    
  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কারি পাতা বা গন্ধরাজ পাতা বলা হয়।   
  • ভারতের তামিলনাড়ুতে কাড়িভেপ্পিলাই বলা হয়। 
  • ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় কারিভেপাকু বলা হয়।
  • ভারতের মহারাষ্ট্রে কড়ি পাত্তা বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • ভারতের গুজরাটে মিথো নিম বলা হয়।
  • উত্তর ভারতে মিঠা নিম বলা হয়। 

কারি পাতা বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মানো পাতার ব্যবহার ও গুনাগুণ প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। অঞ্চল ভেদে নামের সামান্য পরিবর্তন থাকলেও এটি রান্নার সুগন্ধ বৃদ্ধিতে এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সমানভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারি পাতার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে।  

কারি পাতা চেনার উপায় 

কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে এখন আমরা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে আপনারা সহজেই কারি পাতা চিনতে পারবেন। আমার এই ওয়েব সাইটে কারি পাতার ছবি রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিচার করে কারি পাতা চেনার পর যদি কোন সন্দেহ থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনারা এই ওয়েব সাইট থেকে ছবি দেখে নিতে পারেন। 

পাতার রংঃ কারি পাতার রং সাধারণত উজ্জ্বল সবুজ। নতুন পাতা কিছুটা হালকা সবুজ এবং পুরাতন পাতা গাড় সবুজ হয়ে থাকে। 

আকৃতি ও গঠনঃ কারি পাতার গাছ ঝোপ-ঝাড় ধরনের হয়ে থাকে। পাতা ছোট, লম্বাটে ও ডিম্বাকার হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। একটি কাণ্ডে ১১ থেকে ২১ টি পাতা থাকে এবং পাতা গুলো একে অপরের বিপরীতে থাকে। 

গন্ধঃ কারি পাতা ভেঙে বা হাতে কচলালে তা থেকে অনেকটা মসলার মত তীব্র সুগন্ধ বের হয়। এই গন্ধের মাধ্যমেই আপনি সহজে কারি পাতা চিনতে পারবেন। 

আরও পড়ুনঃ মুলার উপকারিতা ও অপকারিতা 

গাছের উচ্চতাঃ সাধারণত এই গাছ ২ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এই গাছের ডালপালা বেশ ঘন হয়। 

কারি পাতা গাছের ছালঃ এই গাছের ছাল হালকা বাদামি রংয়ের এবং কাণ্ড মসৃণ হয়ে থাকে। 

জন্মানোর স্থানঃ কারি পাতা গাছ সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া জন্মায় এবং বাড়ির আঙিনা বা বাগানে দেখা যায়।

প্রতিদিন কতটুকু কারি পাতা খাওয়া নিরাপদ 

প্রতিদিন কতটুকু কারি পাতা খাওয়া নিরাপদ এ সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। নির্দিষ্ট পরিমাণ মেপে কারি পাতা খেলে ব্যাপক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। বেশি খেলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত কারি পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই, তারপরেও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। 

প্রতিদিন-কতটুকু-কারি-পাতা-খাওয়া-নিরাপদ

সাধারণত প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টি কারি পাতা খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। প্রতিদিন নিয়ম মেনে কারি পাতা খেলে আপনার হজমে সহায়তা হবে। কারি পাতায় রয়েছে ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান, যা আপনার পেটের সমস্যা দূর করে দেবে। নিয়ম মেনে কারি পাতা খেলে চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হবে কারণ, কারি পাতায় রয়েছে প্রোটিন ও বিটা ক্যারোটিন উপাদান। 

প্রতিদিন নিয়ম মেনে কারি পাতা খেলে ভিটামিনের অভাব পূরণ হয় কারণ, কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। কারি পাতায় আরও রয়েছে আয়রন, যা আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করে দেয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে। অতিরিক্ত খেলে বড় ধরণের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নাই তবে, কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কারি পাতার অপকারিতা 

কারি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জানতে চলেছি। সাধারণত কারি পাতা স্বাস্থ্যের উপকার করার বিপরীতে ক্ষতি খুবই কম করে থাকে। কারি পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মানবদেহে নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কারি পাতা খেলে আমাদের শরীরের জন্য বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। 

  • অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা এবং বদ হজম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
  • কারি পাতা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। 
  • কারি পাতা খেলে কারও কারও ক্ষেত্রে বমি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।   
  • কারি পাতা বেশি খেলে টক ঢেকুর বা বুক জ্বলার সমস্যা হতে পারে।
  • কিছু মানুষের শরীরে কারি পাতার গন্ধ বা উপাদান থেকে ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি, চুলকানি হতে পারে।
  • কারি পাতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, অতিরিক্ত খেলে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যেয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা খুবই কমে যেতে পারে। 
  • অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে অপ্রয়োজনীয় ওজন কমে যেতে পারে। 
  • ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কারি পাতা বিপদজনক হতে পারে। 
  • গর্ভাবস্থায় কারি পাতা খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। 
  • কারি পাতা বেশি খেলে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। 
  • কারি পাতায় অক্সালেট থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।    
  • বেশি পরিমাণে কারি পাতা খেলে মুখে তিতা বা কটু স্বাদ তৈরি হতে পারে। 
  • কারি পাতায় প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে। 
  • কারি পাতা ত্বকে লাগলে কারও ক্ষেত্রে জ্বালা-পোড়া অনুভূতি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে লিভারের উপর চাপ পড়তে পারে।  
  • অনিয়ন্ত্রিত কারি পাতা খেলে হার্ট বিটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • অতিরিক্ত কারি পাতার ব্যবহার দাঁতের সংবেদনশীলতা বা দাঁত ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে। 
  • কারি পাতা বেশি খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। 
  • কারি পাতার তীব্র গন্ধ মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। 

লেখকের শেষ কথাঃ কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা 

কারি পাতার চমৎকার উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম এবং কারি পাতা সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য পেলাম। 

আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ পোস্ট করা হয়। এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি আপনি বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য পাবেন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে, আজ এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর্টমহলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url